প্রশ্নঃ- কোন আইন বলে জনসাধারন পুলিশকে সাহায্য করতে বাধ্য? জনসাধারন কর্তৃক গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কি কি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়? একজন বেসরকারী ব্যক্তি কখন কি পরিস্থিেিত একজন অপরাধী ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন।
উত্তরঃ- নিম্ন-লিখিত ক্ষেত্র সমূহে কোন পুলিশ অফিসার জনসাধারণের নিকট সাহায্য দাবী করলে সাহায্য করতে বাধ্যঃ-
১৮৯৮ সালে প্রণীত ফৌঃ কাঃ ৪২ ধারা মোতাবেক পুলিশ অফিসার নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রে জনসাধারণের নিকট সাহায্য দাবী করলেঃ-
ক) যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে বা তার পলায়ন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে বাধ্য।
{ফৌ:কা:বি আইনের-৪২(ক) ধারা}
খ) শান্তি ভঙ্গের আশংকা প্রতিরোধ করতে বা অথবা অপরাধ দমন বা সরকারী
সম্পত্তি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য দাবী করলে সাহায্য করতে বাধ্য [ফৌঃ-৪২(খ) ধারা]
তল্লাশি ও জব্দ তালিকার স্বাক্ষীর ক্ষেত্রেঃ- ফৌঃ কাঃ-১০৩ ধারা মোতাবেক পুলিশ অফিসার তল্লাশি করার সময় কোন ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসাবে তলব করলে উক্ত ব্যক্তি তল্লাশি কর্মে সাক্ষী হিসাবে হাজির থাকতে এবং জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর দিতে বাধ্য। [ফৌঃ কাঃ ১০৩ ধারা]
বে-আইনী সমাবেশ ছত্র ভঙ্গ করার ক্ষেত্রে:- ফৌঃ কাঃ-১২৭, ১২৮ ধারা মোতাবেক বে-আইনী সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করনের ক্ষেত্রে পুলিশ অফিসার জনসাধারণের সাহায্য দাবী করলে সাহায্য করতে বাধ্য।
ইহাছাড়াও নিম্ন- লিখি ক্ষেত্রে জনসাধারণ সাহাজ্য করতে পারেঃ-
৩। আদালতের আদেশে আইন সঙ্গত পরোয়ানা কার্যকর করে এবং আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ দিয়ে। { ফৌ: কা: বি: ৪৩,৪৪,৪৫ ধারা।}
৪। ফৌজদারী কার্যবিধি ৯৪ ধারা মতে মামলা তদন্তের স্বার্থে দলিলাদি বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাজিরের জন্য জনসাধারন সাহাজ্য করিতে বাধ্য। {ফৌজদারী কার্যবিধি ৯৪ ধারা}
৫। তল্লাশীর কাজে পুলিশ অফিসার জনসাধারনের কাছে সাহায্য দাবী করলে জনসাধারন সাহাজ্য করিতে বাধ্য। (ফৌ:কা: বি:-১০৩(১)/১০৩(৫) ধারা)
৬। বেআইনী সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য। (ফৌ:কা: বি:-১২৮ ধারা)
৭। মামলার কোন তথ্য প্রদান করে এবং সুরতহাল রির্পোর্টের সাক্ষী হয়ে।
(ফৌ:কা: বি:-১৬০/১৭৫ ধারা)
উপরোক্ত ক্ষেত্র সমূহে কোন ব্যক্তির নিকট সাহায্য দাবী করার পর সাহায্য না করলে পেনাল কোডের -১৮৭ ধারা মোতাবেক শাস্তি ভোগ করতে হবে।
বে-সরকারী ব্যক্তি কর্তৃক গ্রেফতারের পদ্ধতি নিম্ন- আলোচনা করা হলঃ-
১। ১৮৯৮ সালে প্রণীত ফৌঃ কাঃ ৫৯(১) ধারা মোতাবেক কোন ব্যক্তির সম্মুখে কেউ আমলযোগ্য অথবা জামিনের অযোগ্য অপরাধ করলে অথবা সরকার কর্তৃক অপরাধী বলে ঘোষিত জনসাধারণ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন। [ফৌঃ কাঃ ৫৯(১) ধারা]
২। ১৮৭২ সালে প্রণীত অস্ত্র আইনের-১২ ধারা মোতাবেক যদি কোন ব্যক্তি লাইসেন্সসহ অথবা লাইসেন্স ব্যতীত অস্ত্র নিয়ে এমনভাবে চলাচল করে যে, উক্ত ব্যক্তি আমলযোগ্য অপরাধ করতে পারে এমন সন্দেহের ভিত্তিতে জনসাধারণ উক্ত ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন।
[অস্ত্র আইনের-১২ ধারা]
৩। ১৮৮৪ সালে প্রণীত বিস্ফোরক আইনের-১৩ ধারা মোতাবেক যদি কোন ব্যক্তি অবৈধ ভাবে বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য বহন করে তাহলে জনসাধারণ উক্ত ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন। [বিস্ফোরক আইনের-১৩ ধারা]
৪। ১৮৯০ সালে প্রণীত রেলওয়ে আইনের ১৩১ ও ১৩২ ধারা মোতাবেক রেলওয়ে কর্মচারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে অত্র রেলওয়ে আইনের অধীনে অপরাধ অভিযুক্ত ব্যক্তি জনসাধারন বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে। [রেলওয়ে আইনের-১৩১, ১৩২ ধারা, পিআরবি-৩১৬ বিধি]
নোটঃযদি প্রশ্নে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার লেখা থাকে এই দুইটা বাদ যাবে।
১। আদালত যদি কোন ব্যক্তির উপর পরোয়ানা ইস্যূ/ জারী করে তবে উক্ত গ্রেফতার কার্যকর করতে পারে। {ফৌ:কাঃ- ৭৭ ধারা}
২। জমির মালিক, ফার্মের ম্যানেজার ইত্যাদি ব্যক্তির উপর আদালত পরোয়ানা জারী করলে উক্ত ব্যক্তি পরোয়ানা কার্যকর করতে পারবে। {ফৌ:কাঃ- ৭৮ ধারা}
প্র্রশ্নঃ- দেহ তল্লাশীর আইনানুগ পদ্ধতি আলোচনা করুন। একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে রাস্তায় কোন গাড়ী বা কোন ব্যক্তির দেহ তল্লাশীর ক্ষেত্রে কি কি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
একজন পুলিশ অফিসার হিসাবে রাস্তায় গাড়ী বা কোন ব্যক্তির দেহ তল্লাশীর{নোটঃ- দেহ আসলে শুধু দেহ তল্লাশী পয়েন্ট হবে}ঃ- ক্ষেত্রে যেসব সর্তকতা অবলম্বন করতে হয় তা নিম্ন রুপঃ-
১। গাড়ী বা ব্যক্তির দেহ তল্লাশীর পূর্বে সঙ্গীয় ফোর্সদের কে সর্তক থাকার জন্য বিফ্রিং দিব।
২। সকল ফোর্সদের রিফলেটিং বেল্ট পরে এবং সার্চলাইট বা ট্রাফিক কন্ট্রোল লাইট নিয়ে সর্তক ভাবে ডিউটি করবো।
৩। অস্ত্র নিয়ে অনগার্ড পজিশনে থাকতে হবে
৪। সাদা পোষাকে তল্লাশী করা যাবে না।
৫। নিরাপদ দুরুত্ব থেকে গাড়ী থামানোর সিগনাল দিতে হবে।
৬। নিয়মানুযায়ী এবং ধারাবাহিক ভাবে তল্লাশী করতে হবে।
৭। যে কোন একজন গাড়ী সিগনাল দিবে এবং অপর জন কাউকে সন্দেহ হলে সাথে সাথে গাড়ীর চাবি নিয়ে নিবে।
৮। সর্তক তার সাথে সঙ্গীয় দুইজন ফোর্সসহ গাড়ীর ভিতরে তল্লাশী করবো।{পিআরবি-১৫২ বিধি}
৯। গাড়ী তল্লাশী কালে ড্রাইভার ও যাত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে{পিআরবি-৩৩ বিধি}
১০। গাড়ীর ভিতর কাউকে সন্দেহ হলে ফৌ:কা:বি আইনের ৫১ ধারা মোতাবেক তল্লাশী করব। সন্দেহকৃত ব্যক্তি মহিলা হলে ফৌ:কা:বি আইনের ৫২ ধারা মোতাবেক মহিলা বা মহিলা পুলিশ দ্বারা তল্লাশী করতে হবে।
১১। সাাক্ষীর উপস্থিতে দেহ তল্লাশী করতে হবে।
১২। রাস্তায় সন্দেহ জনক ব্যক্তির প্রতি সর্তক দৃষ্টি রাখতে হবে।
১৩। কোন যাত্রীকে হয়রাণী করা যাবে না। {পিআরবি-২৬০ বিধি}
১৪। গাড়ী তল্লাশীতে কোন অবৈধ মালামাল, মাদকদ্রব্য, অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেলে জব্দ তালিকা করে হেফাজতে নিতে হবে {ফৌ:কা:বিঃ-১০২(২) ধারা, পিআরবি-২৮০}
১৫। তল্লাশী কালে অবৈধ মালামাল পাওয়া গেলে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
{পুলিশ আইনের ১৫০ ধারা, পিআরবি-১২০ বিধি, পুলিশ আইন-২৩ ধারা}
১৬। তল্লাশীকালে কোন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হলে তাকে নির্যাতন করা যাবে না।
{পুলিশ আইনের ২৯ ধারা}
১৭। গাড়ী তল্লাশীর বিষয়টি থানার অফিসার ইনচার্জকে জানাতে হবে।
{ফৌ:কা:বিঃ-১৬৮ ধারা, পিআরবি-১২০ বিধি, পুলিশ আইন-২৩ ধারা}
১৮। ফৌ:কা:বি: আইনের ১৫৪,১৫৫ ধারা, পিআরবি-৩৭৭ বিধি মোতাবেক থানায় তল্লাশীর বিষয়ে বিস্তারিত জিডি করতে হবে। {পিআরবি-১২০ বিধি}
১৯। সবর্দা মনে রাখতে হবে ধৃত আসামী যেন কোন ভাবে লাথি মেরে বা আঘাত করে পালিয়ে যেতে না পারে।
নোটঃ-যে কোন তল্লাশী কালে-১০২,১০৩,১৬৫,১৬৬ ধারা, পিআরবি-২৮০ বিধি অনুষরণ করে তল্লাশী করা যাবে।